ক্যাপুচিনোর আদ্যোপান্ত

সকাল কিংবা বিকালে এক কাপ কফি ছাড়া চলেই না আজকাল। তিতকুটে স্বাদের এ পানীয় বেশ নীরবেই বাঙাল মুলুকে জায়গা করে নিয়েছে।

বাঙালির কফিপ্রীতি কিন্তু গরম পানিতে ইনস্ট্যান্ট কফি গুলিয়ে খাওয়ার মাঝে আটকে নেই আর। কফি হাউজগুলো ইতোমধ্যেই নানান স্বাদের নানান ঢং এর কফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

এরই মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যাপুচিনো কফি। নামের মতই বাহারি এ কফির আদ্যোপান্ত নিয়ে আমাদের আজকের ফিচার।

ক্যাপুচিনো কফির নামকরণের সাথে জড়িয়ে আছে ইতালিয়ান ক্যাপুচিন অর্ডারের খ্রীষ্টান ভিক্ষুসমাজ। ক্যাপুচিনোর রঙটা একদম তাদের লম্বা বাদামি আলখেল্লার সাথে মিলে যায়। তার উপর কফির উপর যে ক্রিমি মিল্ক ফোম, সেটা ঠিক যেন আলখেল্লার হুড! এমন চেহারা সুরতের জন্যই কফির নাম হয়ে গেছে ক্যাপুচিনো।

তিন লেয়ারের ক্যাপুচিনো কফির বেইজটা তৈরি হয় এসপ্রেসো কফি দিয়ে। এই এসপ্রেসো কফিটা আবার কী?

অনেকে মনে করেন এসপ্রেসো বুঝি বিশেষ কোনো রোস্টেড কফি বীন। আসলে তা নয়। এসপ্রেসো মূলত কফি বানানোর একটি পদ্ধতি। ক্যাপুচিনোর বৃত্তান্ত জানতে এসপ্রেসো সম্পর্কেও হালকা পাতলা ধারণা থাকা চাই।

সূক্ষ্ণভাবে গুড়ো করা কফি বীনের মধ্য দিয়ে প্রচন্ড চাপে ফুটন্ত পানি প্রবাহিত করে তৈরি করা হয় এই এসপ্রেসো কফি। কফির সাথে পানির অনুপাত, তাপমাত্রা, কত সময় ধরে প্রবাহিত হল ইত্যাদি জটিলতর হিসাব শেষে এসপ্রেসো 

কফির নানারকম প্রকারভেদ করা হয়।

এই এসপ্রেসো কফিকে বেইজ ধরে তাতে গরম দুধ, ক্রিম, কিংবা চকোলেট ইত্যাদি মিশিয়ে বানানো হয় ল্যাটে, প্লেইন ওয়াইট, মোকা আর ক্যাপুচিনো কফি। বিভিন্ন কফিতে বিভিন্ন লেয়ার থাকে, কিন্তু বেইজ ঐ একটাই, এসপ্রেসো কফি।

ক্যাপুচিনোর বেইজে সাধারণত ডাবল শট এসপ্রেসো কফি ব্যবহার করা হয়। ঘটনা জটিল থেকে জটিলতর দিকে মোড় নিলেও কিছু করার নেই। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন ক্যাফেইনবিদ্যা রকেট সায়েন্সের থেকে কম জটিল কিছু নয়। এই ডাবল শট কী সেটা বুঝতে হলে উপরে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। তাপমাত্রা, কফির পরিমাণ, পানি প্রবাহের সময় ইত্যাদির ভিত্তিতে এসপ্রেসো কফিকেও যে নানান ভাগে খন্ড বিখন্ড করা হয়েছে মনে আছে তো? ডাবল শট সেরকমই একধরণের এসপ্রেসো কফি।

অত জটিলতায় না গিয়ে ক্যাপুচিনোর লেয়ার নিয়ে আলোচনা করা যাক। নিচের লেয়ারটা ডাবল শট এসপ্রেসো। এরপর গরম দুধের চিকন একটা লেয়ার। আর সবার উপরে অনেকখানি মিল্ক ফোমের লেয়ার। মন চাইলে এই মিল্ক ফোম লেয়ারের উপর ছিটিয়ে নিতে পারেন চকোলেট গুড়ো।

যেহেতু জ্বাল দেয়া তরল দুধের লেয়ার খুবই কম, তাই ক্যাপুচিনো আপনার কাছে ভীষণ কড়া কফি মনে হতে পারে। তবে ফোমের ক্রিমি টেক্সচার সেই কড়া স্বাদ ভুলিয়ে দিবে খুব সহজেই।

অনেক তো খটমটে জ্ঞান বিতরণ হলো, এত জ্ঞান দিয়ে কী হবে যদি ক্যাপুচিনো না-ই বানিয়ে খেতে পারেন? বাড়িতে তো আর এসপ্রেসো মেশিন নেই!

আপনাদের কথা ভেবেই ছোট্ট করে ঘরে বানানো ক্যাপুচিনো রেসিপি শেয়ার করছি। কম সময়ে ফাঁকিবাজি পদ্ধতিতে বানানো এই রেসিপির নাম দেয়া যাক ‘গরীবের ক্যাপুচিনো’।

প্রথমেই একটা কাপে এক টেবিল চামচ কফি, এক টেবিল চামচ চিনি এবং দুই টেবিল চামচ গরম পানি দিয়ে ভালমত মিশিয়ে নিতে হবে। এই হলো ক্যাপুচিনো বেইজ।

এবার চুলায় হাই হিটে এক কাপ ফুলক্রিম দুধ জ্বাল দিন। এখন লাগবে হিট রেজিস্ট্যান্ট কাঁচের জার বা ফ্লাস্ক। দুধ গরম হয়ে গেলে কাঁচের জারে বা ফ্লাস্কে ঢেলে কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে নিলেই দেখবেন সুন্দর ফোমের মত হয়ে গেছে।

এই ফোমসহ দুধ ক্যাপুচিনো বেইজে ঢেলে দিন। আস্তে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে শৈল্পিকভাবে দুধটা ঢালতে পারলে তাতে নানারকম নকশা এঁকে ফেলা যায়। এরপর মন চাইলে চকোলেট গুড়ো ছিটিয়ে দিন, না চাইলে ওভাবেই থাক।

অবশ্যই এটা অথেন্টিক ক্যাপুচিনো রেসিপি নয়। এই ক্যাপুচিনোর সাথে ল্যাটে, প্লেইন ওয়াইটের পার্থক্য করাও ভীষণ মুশকিল। তবে আশার কথা এই যে, Ignorance is bliss!

 

সবশেষে গরীবের ক্যাপুচিনো হিসেবে এ পদ্ধতিই যে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী, তা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে!

Written by

Afifa Abedin Sawda

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.